বাঙালিদের স্বভাবের জন্য ঘরকুনে অপবাদ থাকলেও কিছু বাঙালি মানুষদের দেখলেই বোঝা যায় বাঙালিদের বহুমুখী প্রতিভা। এমনই এক প্রতিভাবান প্রখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু।তাঁকে নিয়েই আজকের রচনার বিষয় একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী রচনা।

সূচি তালিকা
ভূমিকা:
আধুনিক ভারতের বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক গোপালকৃষ্ণ গোখলে একথা বলেছিলেন “What Bengal thinks today, India thinks tomorrow.” তার এহেন মন্তব্যের পিছনে কাজ করেছিল তৎকালীন বাঙালি সমাজের অভূতপূর্ব সমৃদ্ধ রূপ। সেই সময় বাঙালি বিভিন্ন দিক থেকে সমগ্র ভারতবর্ষকে নেতৃত্বদানে এগিয়ে এসেছিল।
সময়ের প্রয়োজনে সেই সময় বাংলার ভাগ্যাকাশে আবির্ভাব ঘটেছিল এমন অসংখ্য ধূমকেতুর, যারা বাংলা তথা বাঙালির গৌরবকে ভারতবর্ষীয় সমাজে এক সুউচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তাদের মধ্যে কেউ বা সমাজ সংস্কারক, কেউ বা দার্শনিক, কেউ বিপ্লবী, আবার কেউ বৈজ্ঞানিক।
সকলেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে আপন প্রতিভার বহুমুখী বিকাশের মাধ্যমে সমগ্র সমাজকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। সমকালীন বাংলার বুকে জন্ম হয়েছিল এমনই এক কৃতী বৈজ্ঞানিকের, যার নাম শ্রী জগদীশচন্দ্র বসু। তার প্রতি বাংলা তথা সমগ্র পৃথিবীর কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। বাংলার এই মহামানবের প্রতি পরম শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করে তার মহান জীবনপটে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করার উদ্দেশ্যে এই প্রতিবেদনের উপস্থাপনা।
জন্ম ও ছেলেবেলা:
জগদীশচন্দ্র বসুর জন্ম হয় ১৮৫৮ সালের ৩০ শে নভেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি পূর্বপ্রান্তে বা অধুনা বাংলাদেশের অন্তর্গত ময়মনসিংহ গ্রামে। তার বংশ তালিকা থেকে জানা যায় বসু পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রামে।
তার পিতা ভগবান চন্দ্র বসু ব্রিটিশ সরকারের অধীনে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি করতেন। ভগবান বসু ধর্মবিশ্বাসের দিক থেকে একজন ব্রাহ্ম ছিলেন। সে কারণে ছেলেবেলা থেকেই জগদীশচন্দ্র বসুর মনে প্রগতিশীল ভাবধারার বীজ রোপিত হয়ে যায়।
ছেলেবেলায় লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে থাকার সুযোগ হলে তিনি সেই সব অভিজ্ঞতা থেকে নিজের জীবনকে চিনতে শেখেন। পিতার শিক্ষাগত মতাদর্শ ধীরে ধীরে বড় হওয়ার সাথে সাথে ছেলে জগদীশ বসুর মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছিল।
শিক্ষাজীবন:
জগদীশচন্দ্র বসুর পিতা ভগবান চন্দ্র বসু ইংরেজ সরকারের অধীনে ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি করলেও অনুধাবন করতে পেরেছিলেন ভারতবর্ষে কোন ছেলে মেয়ের জন্য ইংরেজি শিক্ষা অপেক্ষা মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের মর্ম অনেক বেশি।
তিনি মনে করতেন মাতৃভাষায় লেখাপড়া না করলে নিজের অস্তিত্বের শিকড়ের সঙ্গে সন্তানের যোগাযোগ গড়ে ওঠে না। সেই কারণে জগদীশচন্দ্র বসুও ছেলেবেলায় কোনদিন ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন নি। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় জন্মস্থান ময়মনসিংহের জেলা স্কুল থেকে।
এর পর তৎকালীন কলকাতার হেয়ার স্কুলে দীর্ঘদিন পড়াশোনা করে ১৮৭৯ সাল নাগাদ তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন। স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করবার সময়ই ইউজিন ল্যাফন্ট নামে একজন খ্রিস্টান যাজক প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের উপর জগদীশচন্দ্র বসুর উৎসাহ বৃদ্ধিতে সহায়তা করেন। যদিও স্নাতক স্তরের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করবার পর ১৮৮০ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞান পাঠের উদ্দেশ্য তিনি লন্ডনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান।
যদিও বিশেষ শারীরিক অসুস্থতার জন্য এই পড়াশোনা তিনি দীর্ঘকাল চালিয়ে যেতে পারেননি। পরবর্তীকালে লন্ডনেই ভগ্নিপতি আনন্দমোহন বসুর সাহায্যে তিনি প্রকৃতি বিজ্ঞান সম্পর্কে শিক্ষালাভের জন্য কেমব্রিজের ক্রাইস্টচার্চ কলেজে ভর্তি হন এরপর ১৮৮৪ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জগদীশচন্দ্র বসু নিজের বিএসসির পড়াশোনা সম্পন্ন করেন।
জগদীশচন্দ্র বসু তার কর্মজীবনে প্রবেশ করেন একজন শিক্ষক হিসেবে। বিএসসির পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে আসার পর তৎকালীন ভারতের গভর্নর জেনারেল রিপনের অনুরোধে জগদীশচন্দ্র বসুকে প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক পদে নিযুক্ত করা হয়। যদিও কলেজের অধ্যক্ষ স্বয়ং এই নিয়োগের বিপক্ষে ছিলেন। যাই হোক এই পদে অন্যান্য ইউরোপীয়দের তুলনায় তার বেতন ছিল অনেক কম।